প্রশান্ত মহাসাগর (Pacific ocean) নামটি প্রথম ব্যবহার করেন ১৫২১ সালে পর্তুগিজ নাগরিক ফার্দিনান্দ ম্যাগলান। আয়তন ও গভীরতার দিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর। যার মোট আয়তন ১৬ কোটি ৬২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি। এটি সমগ্র পানিরাশির প্রায় ৪৫% এবং সমগ্র ভূপৃষ্ঠের ৩৫% যায়গা দখল করে আছে। এর শীর্ষদেশ বেরিং প্রণালী হতে শুরু এবং সর্বাধিক বিস্তার লাভ করেছে দক্ষিণ দিকে। জেনে রাখা ভাল যে বেরিং সাগরের বেরিং প্রণালী এশিয়াকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে সরু জলাশয় দ্বারা পৃথক করেছে। এ মহাসাগরের দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৪,৯৬২ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৬,০৮৯ কিলোমিটার। অর্থাৎ আমরা জানতে পেলাম প্রশান্ত মহাসাগরের দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণের থেকে পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১,১২৭ কিলোমিটার বেশি। এ মহাসাগরের পশ্চিমে এশিয়া, ওসেনিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ এবং পূর্বে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ অবস্থিত।
প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ
প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতা অন্যান্য মহাসাগরের গভীরতা অপেক্ষা অনেক বেশি। এ মহাসাগরের বেশির ভাগই গভীর সমুদ্রের সমভূমি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। গভীর সমুদ্রের সমভূমি অঞ্চল বলতে বোঝায় মহীঢাল যেখান শেষ হয়েছে সেখান থেকে গভীর সমুদ্রের বিস্তৃত সমভূমি এলাকা। সমভূমি বলা হলেও একেবারে যে সমান ভূমি সেটা নয়। কারণ এখানে মালভূমি, পাহাড়-পর্বত এবং আগ্নেয়গিরির কারনে বন্ধুর এলাকা তৈরি করতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের গড় গভীরতা ৪,২৮০ মিটার। তবে সমুদ্রের ৭৮ ভাগ স্থানের গভীরতা বলতে গেলে ৩.৬৫ কিলোমিটারের বেশি।
”Continental shelf” যাকে বাংলায় বলা হয় মহীসোপান। প্রশান্ত মহাসাগর আয়তনে বড় হলেও অবাক বিষয় এই যে, এ মহাসাগরের মহীসোপান অন্যান্য সাগরের তুলনায় অনেক কম। এই কম হওয়ার কারন হলো এ মহাসাগরের বেশির ভাগ তীরস্থ অংশ সরাসরি খাড়াভাবে (vertically) গভীর সমুদ্রে চলে যায়। এ মহাসাগরের কিছু কিছু অংশ রয়েছে যেখানে ভৌগোলিক কারনে কোন মহীসোপান গড়ে ওঠেনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উত্তর ও দক্ষিণে রকি ও আন্দিজ পর্বতমালা এলাকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের পূর্ব প্রান্তে উচ্চভূমি এলাকা। মূলত পর্বতমালা এবং উচ্চভূমি এলাকাতে মহাসাগরের তীরস্থ অংশ সরাসরি কোন প্রকার মহীসোপান তৈরি করা ছাড়াই গভীর সমুদ্রে চলে যায়। তবে ওখস্টক সাগর, পূর্ব চীন সাগর এবং পীত সাগরের উপকূল নিকটবর্তী এলাকাতে প্রশান্ত মহাসাগরের মহীসোপান লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া “Continental slope” যাকে বাংলায় বলা হয় মহীঢাল। যখন কোন মহাসাগরে মহীসোপান কম থাকে তখন সে মহাসাগরের মহীঢাল বেশি হবে। মহীঢাল অধীক খাড়া হওয়ার জন্য তেমন প্রশস্থ হয় না। সাধারণত মহীঢালের প্রশস্থ গড়ে হয় ১৬ থেকে ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে। প্রশান্ত মহাসাগরের মহীসোপান অপেক্ষা মহীঢাল বেশি।
প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের উচ্চভূমিসমূহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: মালভূমি, শৈলশিরা এবং দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ। অ্যালবাট্রস মালভূমি (Albatross plateau) প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিখ্যাত মালভূমি যেটি ক্যালিফোর্নিয়া উপদ্বীপের দক্ষিণ সীমা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর পর্যন্ত বিস্তৃত। শৈলশিরা (Ridge) হলো সাগরের তলদেশের এমন এলাকা যা স্থলভাগের পর্বতমালার ন্যায় অবস্থান করে। প্রশান্ত মহাসাগরে এই শৈলশিরা দেখা যায় দক্ষিণ দিকে ঠিক অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের কাছে। এরকম অসংখ্য মালভূমি এবং শৈলশিরা প্রশান্ত মহাসাগরে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে অসংখ্য দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ (Island and Archipelago) রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যালিউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, জাপান দ্বীপপুঞ্জ, কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, মারকুইসাস দ্বীপপুঞ্জ ইত্যাদি। এর মধ্যে হাওয়াই ও মারকুইসাস দ্বীপপুঞ্জ হলো আগ্নেয়দ্বীপ।
প্রশান্ত মহাসাগরে বেশ কিছু গভীর খাত (Gulf) রয়েছে যেগুলো বেশিরভাগই এই মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থান করে। ম্যারিয়ানা খাত (Mariana trough) সর্বাপেক্ষা গভীর খাত যা গুয়াম দ্বীপ থেকে প্রায় ৩২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এর গভীরতা প্রায় ১০,৮৭০ মিটার। যার কারনে এটিকে পৃথিবীর গভীরতম খাত বলা হয়। এই খাতের গভীরতম অংশের নাম চ্যালেন্জার খাত যার গভীরতা ১১,০৩৩ মিটার। আমরা জানি হিমালয় পর্বতমালার উচ্চতা ৮,৮৪৯ মিটার। সেই হিসাবে আমরা দেখতে পাই ম্যারিয়ানা খাতের গভীরতা এতই বেশি যে সম্পূর্ণ হিমালয় এখানে গ্রাস হতে পারে।
প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্রসমূহ
সমুদ্র (Sea) | আয়তন (Area) (বর্গ কিলোমিটার) |
Australasian Mediterranean Sea | ৯.০৮০ মিলিয়ন |
Philippine Sea | ৫.৬৯৫ মিলিয়ন |
Coral Sea | ৪.৭৯১ মিলিয়ন |
Chilean Sea | ৩.৬ মিলিয়ন |
South China Sea | ৩.৫ মিলিয়ন |
Tasman Sea | ২.৩ মিলিয়ন |
Bering Sea | ২ মিলিয়ন |
Sea of Okhotsk | ১.৫৮৩মিলিয়ন |
Gulf of Alaska | ১.৫৩৩মিলিয়ন |
East China Sea | ১.২৪৯ মিলিয়ন |
Mar de Grau | ১.১৪ মিলিয়ন |
Sea of Japan | ৯,৭৮,০০০ |
Solomon Sea | ৭,২০,০০০ |
Banda Sea | ৬,৯৫,০০০ |
Arafura Sea | ৬,৫০,০০০ |
Timor Sea | ৬,১০,০০০ |
Yellow Sea | ৩,৮০,০০০ |
Java Sea | ৩,২০,০০০ |
Gulf of Thailand | ৩,২০,০০০ |
Gulf of Carpentaria | ৩,০০,০০০ |
Celebes Sea | ২,৮০,০০০ |
Sulu Sea | ২,৬০,০০০ |
Bismarck Sea | ২,৫০,৪০০ |
Gulf of Anadyr | ২,০০,০০০ |
Molucca Sea | ২,০০,০০০ |
Gulf of California | ১,৬০,০০০ |
Gulf of Tonkin | ১,২৬,২৫০ |
Halmahera Sea | ৯৫,০০০ |
Bohai Sea | ৭৮,০০০ |
Gulf of Papua | ৭০,৪০০ |
Koro Sea | ৫৮,০০০ |
Bali Sea | ৪৫,০০০ |
Savu Sea | ৩৫,০০০ |
Seto Inland Sea | ২৩,২০৩ |
Salish Sea | ১৮,০০০ |
Seram Sea | ১২,০০০ |
so informative..
Thanks you for giving this information….
ধন্যবাদ আপনাকে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথেই থাকুন।